শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন
পরিবর্তন ডেস্কঃ অনিশ্চিত জীবনের দিকে যাচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। টানা ১১ দিন পরিবহন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। পরিবার নিয়ে এক প্রকার না আধাপেটা খেয়ে দিন পার করছে। নতুন করে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করায় তাদের সেই শঙ্কা আরো বেড়ে চলেছে। দৈনিক চুক্তিতে কাজ করা এই শ্রমিকদের বাঁচানোর দাবী করে তারা বলেন, তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ দুঃসময় অতিবাহিত হতে হচ্ছে তাদের। তাদের চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দেয়ার দাবী জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও বাস মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সংশ্লিস্টরা জানান, হরতাল-অবরোধেও এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি দেশের পরিবহন খাত। গণপরিবহনে এমন লকডাউন নজিরবিহীন। ফলে হঠাৎ বেকার হয়ে পড়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট জেলার কয়েক হাজার লোক। পরিবহন সংগঠনগুলো দাবি করেছে, সারাদেশে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন কয়েক হাজার।
শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, অনেক বাস মালিকরা এই দুঃসময়ে তাদের পাশে নেই। হাজার হাজার শ্রমিক না খেয়ে রয়েছে। এই মুহূর্তে তাদের পাশে না দাঁড়ালে কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। দ্রুত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পরিবহন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, ‘পরিবহন শ্রমিক শুধু বাসচালক বা হেলপার নয়। মিনিবাস ট্রাক কাভার্ড ভ্যান অটোরিকশা ট্যাংক লরিসহ ১৯ ধরনের পরিবহন রয়েছে যা দেশের সড়ক পথে চলে। এদের সবাই এখন বেকার।’ তারা না পারছে কারো কাছে চাইতে-না পারছে সইতে।
সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বসে থাকা এক বাস চালক জানান, গত কয়েক বছরে পরিবহনের ওপর হরতাল-অবরোধসহ নানা সংকট ছিল। কিন্তু সে সময় পরিবহন বন্ধ হয়নি। তার ১৮ বছরের চালক জীবনে এমন অবস্থা দেখেননি যে গণপরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। ‘পরিবহন লকডাউন থাকায় সরাসরি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন শ্রমিকরা। মালিকরাও পরিবহন বন্ধ রেখে লোকসান গুনছেন। তারা পরিবহন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান করেছন।’ তিনি আরো বলেন, নতুন করে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ হওয়ায় নতুন বিপদের মাত্রা যোগ হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের তেমন কোনো সঞ্চয় থাকে না। উপার্জনের পথ বন্ধ থাকায় এই পরিবহন শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এক অটোরিকসা চালক জানায়, উপায়হীন হয়ে অনেক অটোরিকশা চালক রাস্তায় নামার চেষ্টা করছে। যা চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ দুর্যোগ মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহার-অনাহারে থাকার যন্ত্রণা এই ট্যাক্সি কার, অটোরিকশা চালকসহ পরিবহন শ্রমিকদের কাছে করোনা সংক্রমণের ভয়ের চেয়ে বড় হয়ে উঠছে। অনাহারে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের চলমান প্রচেষ্টাকে সফল করার পাশাপাশি দুর্যোগ পরবর্তী অর্থনীতিকে সচল করতেও এই শ্রমজীবীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক শ্রমিক জানান, বর্তমানে আমরা বেকার অবস্থায় আছি। জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মালিকদের মাধ্যমে আমরা দৈনিক চুক্তিতে কাজ করি। সমিতির সদস্যদের বা বাস মালিকদের কাছে আমাদের তথ্য আছে। শ্রমিক ইউনিয়নেও আমাদের তথ্য আছে। আমাদের সকলের পরিচয় পত্র আছে। আছে সদস্য নম্বর। আমাদের সেই সদস্যদের তালিকা ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দিলে এই দুঃসময়ে আমরা পরিবার নিয়ে খেয়ে বেচে থাকতে পারি। তারা বাস মালিকদের সহায়তা করার আহবান জানান। শ্রমিকরা আরো জানান, কবে পরিবহন খুলবে তাও জানি না। আমাদের কিছু সহায়তা দিলেও আমাদের না খেয়ে থাকতে হতো না। এ বিষয়ে তারা সরকারের সুদৃস্টি কামনা করেন। পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য ও করোনা থেকে সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে শ্রমিকরা।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ২৪ মার্চ থেকে গণপরিবহনে লকডাউন ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই সারা দেশই কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। লক ডাউন চলবে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।